চার দিকে যেন মৃত্যুর ফাঁদ। নেই বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, খাদ্য। প্রতিদিনই একটু একটু করে জেঁকে বসছে শীত অথচ ঘর গরম রাখার উপায় নেই।
প্রযুক্তির এই বিশ্বায়নের যুগে এসেও মানুষ দেখছে প্রস্তর যুগের প্রতিচ্ছবি। গত কয়েক মাস থেকেই ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো টার্গেট করে হামলা করছে রাশিয়া। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, বর্তমান যুগে বসেও অতীত স্মরণ করছে ইউক্রেনের মানুষ। রাজধানীর বড় সড়কগুলোতেও টর্চ লাইট জ্বেলে পথ চলছেন বাসিন্দারা।
আর ঘরে-বাইরে-দোকানে মোমবাতি। মস্কোর এ কৌশলকে বিশেষজ্ঞরা তখন থেকেই রাশিয়ার ‘ডেথ ট্রাপ/উইন্টার ট্রাপ’ নামগুলোতে পরিচিত করেছিলেন। যার প্রকৃত চেহারা এখন দেখছে গোটা বিশ্ব। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে গোটা ইউক্রেন। দেশটির ৪০ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎহীন। কিয়েভের সুউচ্চ বিল্ডিংগুলোয় চলছে না লিফট। ঘোর অন্ধকারে এদের মনে হয় কোনো মৃত্যুফাঁদ। মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়ার সুযোগ নেই। প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে কিংবা খানিকটা উষ্ণ হতে মানুষ জড়ো হচ্ছে সাহায্য কেন্দ্রে। শুধু রাজধানীতেই পানি ও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছে লাখ লাখ মানুষ।
লভিভ, খেরসন, মারিউপোলসহ দেশটির সব বড় শহরেই একই অবস্থা। মঙ্গলবার রাতভর ৭০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিয়েভের পানির লাইনগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ গ্রিড মারাত্মভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত দুদিন ধরেই এই সংকট চলছে কিয়েভে। ৩০ লাখ মানুষের শহরটির অর্ধেক মানুষই এখন অন্ধকারে। শুক্রবারও শহরের প্রায় সবখানেই পানির জন্য দীর্ঘ লাইনের দৃশ্য দেখা গেছে । প্লাস্টিকের বোতল হাতে ছুটছে পানির সন্ধানে।
২৬ তলা একটি হাইরাইজ বিল্ডিংয়ে শুধু আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল বলে জানান আনাসথেসিয়া পাইরোজেঙ্কো নামের এক নারী। জানান, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে তিনি এবং তার স্বামী পালিয়ে যান ফ্লাট ছেড়ে। বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা প্রস্তর যুগে আছি।’ কিয়েভের অনেক বাসিন্দাই খাবারের বাক্স, লাইট, পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে লিফটে ওঠেন।
দীর্ঘ সময় লিফটে আটকে থাকলে বেঁচে ফেরার জন্য। অনেকে আবার সেগুলো লিফটেই রেখে যান-বাকিদের কথা ভেবে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গ্রিড অপারেটর ‘ইউক্রেনারগো’র তথ্যানুসারে, সারা দেশে কমপক্ষে ১৫টি প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতির কারণে ৪০ শতাংশ ইউক্রেনীয়রা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কাজও। দন্ত চিকিৎসক ভিক্টর তুরাকেভিচ বলেন, তিনি তার রোগীদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া তার কেন্দ্রীয় কিয়েভ ক্লিনিক এমনকি দিনের বেলাও কাজ করতে পারে না। তবে, কিয়েভের বেশির ভাগ হাসপাতাল ইতোমধ্যে জেনারেটর পেয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।